জাকির হোসেন সুমন : মহানগর লস এঞ্জেলেস এই মুহূর্তে মেতে উঠেছে আসন্ন দুর্গাপুজোর আনন্দে। ক্রম বর্দ্ধমান বাঙালি জন সংখ্যার প্রয়োজন ও উত্সাহে এখন এই মহানগরে কম করে পাঁচটি পুজোর আয়োজন হচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা গুলির পরিচালনায়। পুজোর অঙ্গ হিসেবে আয়োজিত হচ্ছে বাংলার সংস্কৃতির প্রাণ, নাচ গান ও নাটকের। প্রবাসে বিশেষ করে যাত্রা বা নাটক বাঙালির বহুদিনের ট্রাডিশন। এবারে লস এঞ্জেলেসের বিশেষ খবর ভারত ও বাংলাদেশ থেকে আসা বাঙালিরা মিলিত ভাবে মঞ্চস্থ করতে চলেছেন উভয় বাংলার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনী অবলম্বনে রচিত “নীলকন্ঠ নজরুল” বলে একটি নাটক। মদনগোপাল মুখোপাধ্যায়ের রচিত নাটকটির একটি বেতার রূপ কলকাতা আকাশবাণী কেন্দ্র থেকে গত বছর সম্প্রচারিত হয়েছিল এবং এই নাটকটি চন্দননগরের “অবশেষে” নাট্য গোষ্ঠি বিজয় দত্তর পরিচালনায় আগামী বছর সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় রবিবার স্থানীয় রবীন্দ্র ভবনে মঞ্চস্থ করতে চলেছেন।
লস এঞ্জেলেসে নাটকটি পরিচালনা করছেন কালাচাঁদ শীল, অর্ণব ব্যানার্জি ও সৌম্য মুখার্জী। অনেক অনেক মাইল ড্রাইভ করে, অনেক সময় দিয়ে চল্লিশ পঞ্চাশ জন নারী পুরুষ মিলে এই নাটকটিকে সফল করতে ব্রতী হয়েছেন। আগামী ১১ই নভেম্বর রবিবার নাটকটি মঞ্চস্থ করা হবে স্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচশ আসন যুক্ত একটি সুবিশাল প্রেক্ষাগৃহে। এই নাটকটি দেখতে আসার জন্য এখানের দ্বিতীয় প্রজন্ম, স্থানীয় আমেরিকান ও বাংলা ভাষা যাদের মাতৃভাষা নয় তাদের মধ্যেও যথেষ্ট উত্সাহ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। এদের কথা মনে রেখে নাটকের সংলাপগুলিকে ইংরেজিতে অনুবাদ করে সমান্তরাল ভাবে পর্দায় প্রেক্ষিত করা হবে।
আজকের এই অসহিষ্ণুতার দুঃসময়ে কাজী নজরুলের জীবন ও আদর্শ আমাদের সঠিক পথের সন্ধান দেয়। যেখানে মানুষের পরিচয় মানুষ হিসাবেই সত্য। কোনও বিশেষ ধর্ম পরিচয়ের সংকীর্ণ গন্ডীর মধ্যে তা আবদ্ধ নয়। নজরুল আমাদের শিখিয়েছেন মানুষকে মানুষ হিসাবেই নিঃশর্ত ভাবে ভালবাসতে। একথা আমরা বারবারই বিস্মৃত হই। আশা করি এই নাটক আবার আমাদর স্মরণ করাবে মানবতার সেই অমোঘ সত্য কে। যে আনন্দময়ীর আগমনে কবিতা একদিন কবির হাতে শৃঙ্খল পরিয়েছিল সেই আনন্দময়ীর প্রাঙ্গণেই আজ অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সব ধর্ম, সব মতের মানুষের মিলন মেলা ভারতবর্ষ থেকে অনেক হাজার মাইল দূরে সপ্ত সিন্ধু পারে প্রবাসের মাটিতে।