জিপিএ খারাপ হলে মেয়েরা কেন বিষ খায়?
আজ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ৭/৮ জন জিপিএ খারাপ করা ছাত্রী বিষ খেয়ে চিকিৎসা নেয় । হয়তো পরিবারের প্রত্যাশানুযায়ী জিপিএ অর্জন করতে পারেনি অনেকে, তাদের মনে বা পরিবারে আজ অনেকটা বিষাদের ছাপ পড়েছে । ছেলেদেরও জিপিএ খারাপ হয়েছে, কিন্তু দুঃখজনক সামাজিকভাবে মেয়ে বলে হেয় ভাবছে মেয়েরা নিজেকে। কারণ, এ ফলাফলের উপর মেয়ের অনেক কিছুই নির্ভর করছে যা সামাজিকভাবে ছেলের ক্ষেত্রে নয়।
যাহোক, এবার এসএসসি ফলাফলে আমার প্রজন্মের কাছের দুইজনের দুই সন্তান রয়েছে। ব্যস্ত থাকায় দুপুরের পর একজনের অভিভাবকের কাছ থেকে ৪ টি মিসড কল এবং আর একজনের কাছ থেকে কোন কল পেলাম না। ধারণা পরিস্কার, যার কল পেয়েছি তাঁর সন্তান গোল্ডেন জিপিএ আর যার কল পাইনি, একটু আগে কল করেও রিচ করতে পারলাম না, মানে তাঁর সন্তানের অল্পের জন্য গোল্ডেন ছুটে গেছে- বিষাদের ছায়া বিরাজ করছে তাঁদের ঘরে। তারপরে আরও বিষয় আছে গোল্ডেন পেয়েছে গ্রামের স্কুল থেকে। শহরে থেকে গোল্ডেন মিস হওয়া অভিভাবকের কাছে অনেক প্রেস্টিজের।
অভিভাবকদের একটি কথা মনে করা উচিত যে, আজকে ছেলে-মেয়েদের সফলতা বা ভালো জিপিএ প্রাপ্তি অনেকটাই শুধু সিলেবাসভুক্ত বিষয়ের উপর। জীবনে সফল বা চৌকস হওয়ার অনেক উপায় আছে। লেখাপড়ার বাহিরেও নাচ-গান, অঙ্কন, খেলা, ফ্যাশন ডিজাইন, মডেলিং, অভিনয় জগৎ, লেখালেখি যে যেটাতে ভালো, পারদর্শিতা দেখাতে পারে, বিখ্যাতও হতে পারে। আমরা জানি, পরীক্ষায় ফেইল করা বা অকৃতকার্য হওয়া অথবা ড্রপআউট (ঝরেপড়া) হওয়া খারাপ, সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার বিষয়।
কিন্তু স্কুলের পরীক্ষায় গোল্ডেন ফেইল বা সফল ড্রপআউট বলেও একটা নতুন ধারণা আছে। আর তাই সিলেবাসভুক্ত পরীক্ষায় সফল হতে না পেরে অনেকে ব্যতিক্রমী মেধা-প্রতিভার বলে নিজের আলাদা ক্যারিয়ার বা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেও প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছেন। অনেকে পরীক্ষায় ফেইল বা ড্রপআউট হওয়ার পরও ভিন্ন বিষয়ে চৌকস হওয়ার কারণে বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বা মডেল হয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়েছেন। জীবনে সফল হতে সব সময় লেখাপড়ার স্কুলে যেতে হয় না। লেখাপড়ার স্কুলে ভালো ফলাফল না করে বা সফল না হয়েও অনেকে বড় বড় উদ্যক্তা হয়েছেন।
মেয়েদের উৎসাহ দরকার, মনোবল দরকার- পরিবারের পুরুষরাই তা দেখবেন। মেয়েদর মাঝে অনেক প্রতিভা লুকায়িত থাকে, সেই সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। দুই বছর আগের কথা, ব্রাজিলের আলোচিত মডেল জিজেলে বুন্ডজেন। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির শুভেচ্ছাদূতদের একজন তিনি। ১৩ বছর বয়সে জিজেলে মডেলিং শেখার কোর্সে নাম লেখান। শিক্ষাসফরে যাওয়ার সময় ১৪ বছর বয়সে মডেল এজেন্সির চোখে পড়েন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তার লেখাপড়ার স্কুলে আর যাওয়া হয়নি।
তাই অনুরোধ, অভিভাবকরা একটু ধৈর্য ধরুন এবং সন্তানদের (বিশেষ করে মেয়ে সন্তানদের) গালমন্দ, তাচ্ছিল্য বা নিরুৎসাহিত না করে ভালো পরামর্শ দিয়ে বিকল্প পথের স্বপ্ন দেখান। সিলেবাসের বাহিরের প্রতিভাকেও জাগ্রত হতে সন্তানকে এপ্রিশিয়েট করুন। আপনি আপনার স্বপ্নকে সন্তান দিয়ে পূরণের মানসিকতা পরিহার করুন।
লেখক : আবু আহাম্মদ আল মামুন, এসএসপি, সিটিএসবি, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ।
জিপিএ যেমনই হোক মেয়েদের উৎসাহ দিন, মনোবল বাড়াতে সহায়তা করুন : এসপি মামুন
