চরভদ্রাসনের মানসিক ও বাক প্রতিবন্ধী সুমন রাজবাড়ীতে হয়ে গিয়েছিল গলা কাটা মামলার সন্দেহভাজন আসামি

এ এস কাজল, বিশেষ প্রতিবেদক: ২৩ আগস্ট বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়েছিল সুমন। পাঁচদিন পর গত ২৮ আগষ্ট আদালতের মাধ্যমে তাকে কাছে ফিরে পায় বাবা। এর মধ্যে গলাকাটা মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবেও আটক করা হয়েছিল সুমনকে।

ফরিদপুরের চরভদ্রাসনের তরুণ সুমন মোল্যা (২২)। ছোট বেলাতেই মা হারা সুমন মানসিক ও বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায়ায় তার মুখে বাবা ডাক শোনা হয়নি ফুটপাতের লবন ব্যাবসায়ী মোসলেম মোল্যার।

মোসলেম মোল্যা চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের বিএস ডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি উপজেলা সদর বাজারে লবনের ব্যবসা করেন। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সুমন চতুর্থ। ভাইবোনদের মধ্যে সুমন একাই মানসিক ও বাক প্রতিবন্ধী।

২২টি বছর ধরে সুমনকে বাবা-মায়ের স্নেহে লালন পালন করে আসছেন মোসলেম। বাবা লবন বিক্রি করে আর সুমন একটি বস্তা নিয়ে বাজারের বিভিন্ন জায়গায় পরে থাকা কাগজ কুড়ায় আর রাতে কাগজে থাকা ছবি দেখে সময় কাটে তার। এতেই যেন সে তৃপ্ত। সংসারের কোন ঝুট ঝামেলা তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। কাগজ কুড়াতে কুড়াতে সুমন কখনও বিভিন্ন বাজারে চলে যায়, আবার রাতে বাড়ী ফিরি আসে।

গত ২৩ আগষ্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়ী হতে বের হয়ে আর বাড়ী ফিরে আসেনি সুমন। বাবা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। পরে ২৭ আগষ্ট দুপুরে চরভদ্রাসন থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরী করে তার বাবা। বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় সুমনের হারানোর বিষয়টি তুলে ধরেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।

অন লাইনে এ খবর দেখে ওই দিন বিকেলে রাজবাড়ী থানার সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আরিফুজ্জামান চরভদ্রাসন থানায় ফোন করে সুমনের আটক হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে বলেন, একটি গলা কাটা মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে সুমন তাদের হেফাজতে রয়েছে। সুমনের একটি ছবি তুলেও পাঠান আরিফুজ্জামান। ছবি দেখে সুমনকে সনাক্ত করেন তার বাবা।

জানা যায়, রাজবাড়ী সদর থানার সুলতানপুর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের পাহাড়ারত জনতার হাতে গলা কাটা মামলার সন্দেহভাজান হিসেবে ধরা হয়েছে সুমন। জনতার হাতে ধরা পরার পর জনতার জিজ্ঞাসার কোন জবাব দিতে পারেনি মানসিক ও বাক প্রতিবন্ধী সুমন। ক্ষিপ্ত জনতার গণপিটুনি দেয়।অতিউৎসাহী কেউ কেউ ছবি/ভিডিও তুলে ফেসবুকে গলাকাটা আখ্যা দিয়ে প্রচার করে।

প্রসঙ্গত কয়েকদিন পূর্বে রাজবাড়ীর বিভিন্ন স্থানে গলা কেটে চার নারী ও শিশুকে হত্যার ঘটনা ঘটে। তারপর হতে গ্রামবাসীরা রাত জেগে পাহাড়া দেয়া শুরু করে।

পরে রাজবাড়ী থানা পুলিশ জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে সুমনকে। সুমনকে থানায় নিয়ে আসার পর পুলিশ বুঝতে পারে সে মানসিক ও বাক প্রতিনিধি। গত ২৭ আগষ্ট সুমনকে রাজবাড়ী জেলার মূখ্য ও বিচারিক হাকিমের আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। আদালত সুমনকে ঢাকার মিরপুরের সরকারী বিশ্রামাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। ওইদিন থানায় হেফাজতেই সুমনকে রাখে পুলিশ। পরদিন সুমনকে নিয়ে ঢাকার মিরপুরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল রাজবাড়ি পুলিশের।

গত মঙ্গলবার (২৮ আগষ্ট) ভোরে চরভদ্রাসনের এক সাংবাদিককে নিয়ে রাজবাড়ী থানায় গিয়ে হাজির হন সুমনের বাবা মোসলেম মোল্লা।
রাজবাড়ী সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর জানান, সুমনের বাবার কাছ থেকে সুমন সম্পর্কে সব খবর জানতে পারার পর গত মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে মানসিক ও বাক প্রতিবন্ধী সুমনকে তার বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়।

সুমনের বাবা মোসলেম মোল্যা বলেন, ১৬ বছর আগে সুমনের মা মারা যায়। এর পর থেকে সসুমনকে আমি মা ও বাবার স্নেহ দিয়ে লালন পালন করেছি। সুমন মানসিক ও বাক প্রতিবন্ধী। সব সময় ওকে চোখে চোখে রাখতাম। এরপরও গত বৃহস্পতিবার আমি আমার সুমনকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমার সৌভাগ্য আমি আবার ওকে ফিরে পেয়েছি।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments