সালথায় পুরোনো আমলের জমিদার বাড়ী অন্যের দখলে

মনির মোল্যা : আদালতের রায়ের পরেও ফরিদপুরের সালথায় পুরোনো আমলের জমিদার বাড়ি অন্যের দখলে। উপজেলার আগুলদিয়া গ্রামে ৩শ বছর আগের জমিদার বাড়ী ৪৫ বছর ধরে অন্যের দখলে রয়েছে। জমিদার বাড়ীর মন্দির ও শ্মশান ফিরে পেতে চায় উত্তসুরীরা।

অনুসন্ধান করে জানা যায়, ইংরেজী শাসনামল ১৫০০ খ্রীষ্টাব্দের মাঝামাঝিতে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার আগুলদিয়ায় গড়ে ওঠে জমিদার বাড়ী। তৎকালীন সময়ে জমিদার বাড়ীর প্রধান হরেনাথ গুহ ঐ এলাকায় ব্রিটিশ শাসন পরিচালনা করেছিলেন। হরেনাথ গুহ’র অবর্তমানে একই দায়িত্ব পালন করেছিলেন তার পুত্র রামকুমার গুহ।
রামকুমার গুহ’র পর ব্রিটিশ শাসনামল থেকে পর্যাক্রমে ত্রৈলক্ষ গুহ, হৃদয় নাথ গুহ, বিপিন গুহ, প্রশন্ন কুমার গুহ, কৃপা নাথ গুহ, অমুল্যনাথ গুহ শিতানাথ গুহ, বিরাজ মোহন গুহ, গণেশ চন্দ্র গুহসহ এর আগে আরো নাম না জানা কয়েকজন জমিদার পরিবারের উত্তসুরী ১৯৪০ ইং সাল পর্যন্ত জমিদার বাড়ির দায়িত্বে ছিলেন।

গনেশ চন্দ্র গুহ মারা যাওয়ার পর তার ছেলে কিরন চন্দ্র গুহ বাংলাদেশের যুদ্ধকালীন সময়ে আত্ম ভয়ে জমিদার বাড়ি ছেড়ে ফরিদপুরের গোয়ালচামট শ্রী আঙ্গিনার পাশে আশ্রয় নেন। তারপর থেকেই ফাকা হয়ে থাকে আগুলদিয়া জমিদার বাড়ি। এরপর জমিদারের ১৩.৯০ একর জমি সরকারীভাবে একওয়ার হয়ে যায়।

এসময় তৎকালীন ক্ষমতাসীনরা সরকারের নিকট থেকে লিজ নিয়ে ভোগ দখল করেন। আর ১৯৭৬ ইং সালে নগরকান্দার বিল্লাল হোসেন তালুকদার জমিদার বাড়িটি দখল করে বসবাস শুরু করেন। বিল্লাল তালুকদার মারা যাওয়ার পর তার ৭ সন্তান ঐবাড়িতে বসবাস করেন বলে জমিদারের উত্তরসুরী রিপন গুহ এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। জমিদার বাড়ির উত্তসুরী কিরন চন্দ্র গুহ জমি ফিরে পাওয়ার জন্য ২০১২ ইং সালে ফরিদপুর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ২০১৫ ইং সালে ফরিদপুর সাব জজ ৩য় আদালত (অর্পিত সম্পত্তি ট্রাইবুনাল) কিরন চন্দ্র গুহের পক্ষে রায় প্রদান করেন। রায়ের পর সমস্ত সম্পত্তির লিজ বন্ধ করে দেন সালথা উপজেলা ভুমি অফিস।

কিরন চন্দ্র গুহের একমাত্রপুত্র রিপন চন্দ্র গুহ দেশের বাইরে থাকার কারণে কিরন চন্দ্র গুহের পিশাতো ভাই ধীরেন নাথ বিশ্বাসকে সকল সম্পত্তির পাওয়ার অফ এ্যার্টনি দিয়ে যান। এরপর ২০১৬ ইং সালের প্রথম দিকে কিরণ চন্দ্র গুহ মারা যায়। এদিকে আদালতের রায়ের পর গত ২ মাস আগে ১২একর ১৫ শতাংশ জমি দখল করেছেন বাদী পক্ষ। কিন্তু জমিদার বাড়িসহ ১ একর ৭৫ শতাংশ জমি এখন বাদীর দখলে আসেনি। বর্তমানে মৃত বিল্লাল তালুকদারের ৭ সন্তান জবরদখল করে আছে।

জমিদার বাড়ি দেওয়ালে দক্ষিণ পাশে মন্দির ও বাড়ির পুর্ব পাশে রয়েছে শ্মশান বলে ধীরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস জানান। জমিদার বাড়িসহ মন্দির ও শ্মশান ফিরে পেতে ধীরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও রিপন চন্দ্র গুহ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments