নেপালের ললিতপুরে স্থানীয় উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পিছিয়ে পড়া নারী এবং তরুন গোষ্ঠীর সদস্যদের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় অভিযোজনে বিকল্প কৃষি প্রক্রিয়া বিষয়ে ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জার্মান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জিআইজেড-সিম এর অর্থনৈতিক সহায়তায় ইউরোপ ভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা বাসুগ এবং নেপালি উন্নয়ন সংস্থা সল্ভ নেপাল এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। নেপালের ললিতপুর অঞ্চলের বিভিন্ন মহিলা সমবায় সমিতি, নারী উন্নয়ন সংস্থা এবং পরিবেশ বিষয়ক সংগঠনের ৬৮ জন সদস্য এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। সল্ভ নেপাল এর নির্বাহী পরিচালক রাজেন্দ্র বাহাদুর প্রধান সভাপতিত্বে প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন নেপালে জিআইজেড/সিম এর জাতীয় প্রতিনিধি পাজমা দহল এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাসুগ সভাপতি বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া এবং বাসুগ এর ইউকে সমন্বয়কারী আনসার আহমেদ উল্লাহ।
জিআইজেড-সিম এর নেপাল সমন্বয়কারী দহল সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে জলবায়ু অভিযোজন প্রক্রিয়ায় নারী জনগোষ্ঠীর সদস্যদের সক্রিয় ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নেপালের দুর্গম পাহাড়ি এবং গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষের এবং বিশেষভাবে নারীদের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। এছাড়া প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী মহিলারা যেসব অঞ্চল থেকে এসেছেন, তাঁদের সেই এলাকা পরিদর্শনের ফলে তিনি সেই এলাকার মানুষের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে তাঁদের জন্য এই প্রশিক্ষণের গুরুত্ব ও কার্যকারিতার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সল্ভ নেপাল সদস্য এবং পরিবেশ বিশেষজ্ঞ সোহান শ্রেষ্ঠ, সল্ভ নেপাল এর সামাজিক উন্নয়ন কর্মকর্তা নরা মায়া রানা এবং সুশাসন প্রকল্পের জেলা সমন্বয়কারী প্রতিজ্ঞা নৈপানে প্রশিক্ষণের বিভিন্ন অধিবেশন সঞ্চালন করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সল্ভ নেপাল এর হিসাব রক্ষক নমিতা শ্রেষ্ঠ এবং মাঠ কর্মকর্তা বাসনা মায়া মরপা ও ইয়াদব নেপাল।
বাসুগ চেয়ারম্যান বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া বলেন, নেপাল এবং বাংলাদেশ সহ এশিয়ার দেশগুলোতে পরিবারে এবং সমাজে নারীরা অত্যন্ত অবহেলিত। তারা নানা দুর্যোগে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এবং কঠিন পরিশ্রম করে থাকে। অথচ তারা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকে। নেপালের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এখানকার মানুষ খাদ্য সংকটের ঝুকিতে রয়েছে। তাই এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তারা জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে অভিযোজন প্রক্রিয়া এবং বিকল্প কৃষি পদ্ধতির উপর এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। এর ফলে তারা একদিকে নিজেদের খাদ্য নিশ্চয়তা বৃদ্ধি করতে পারবে এবং অন্যদিকে নিজেদের ক্ষমতায়ন করতে সক্ষম হবে।
অনুষ্ঠানে অতিথি বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাসুগ জার্মানির প্রকল্প সমন্বয়কারী এএইচএম আব্দুল হাই। প্রকল্পের আওতায় নেপালের পিছিয়ে পড়া নারীগোষ্ঠীর উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং অভিযোজন বিষয়ের উপর নির্মিত তথ্যচিত্র দেখানো হয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায়।
কর্মশালার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল নেপালের সুবিধাবঞ্চিত নারী ও যুবগোষ্ঠী, পরিবেশ কর্মী এবং স্থানীয় উন্নয়ন কর্মীদের মাঝে জলবায়ু অভিযোজন, টেকসই উন্নয়ন এবং খাদ্য নিশ্চয়তা বিধানের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং দক্ষতা বৃদ্ধি। কাঠমান্ডূ কর্মশালা এবং ললিতপুরে প্রশিক্ষণ ছাড়াও একই বিষয়ে লক্ষিত জনগোষ্ঠীর সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে কাঠমান্ডূতে আরেকটি প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে। এছাড়া নেপালি অভিবাসীদের নিয়ে জার্মানির রাজধানী বার্লিন নগরীতে আগামী বছর আরেকটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।