রাজনিতির মাঠে এক কিংবদন্তি নারী- সাজেদা চৌধুরী

 

মনির মোল্যা : সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী রাজনীতির দুর্দিনের কাণ্ডারি। সাবেক মন্ত্রী, বর্তমানে জাতীয় সংসদের উপনেতা।

১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ হওয়ার পর দলের মহাদুর্দিনে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দলকে সংগঠিত করতে ঘুরে বেড়ান পুরো দেশ। জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনের রোষানলে পড়ে যেতে হয় কারাগারে। পাকিস্তান জমানা থেকে বাংলাদেশের সব সামরিক-স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের সংগ্রামে অগ্রকাফেলায় ছিলেন তিনি।

ফরিদপুরের মেয়ে সাজেদা চৌধুরীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর পরিচয় হয় ১৯৫৬ সালে চট্টগ্রামে। সে সময় থেকেই তিনি জড়িত হন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে। বঙ্গবন্ধু তাঁকে চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকায় এসে রাজনীতি করতে বলেন। এরপর তিনি ঢাকায় চলে আসেন। সাজেদা চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৫ সালের ৫ মে।

তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন চট্টগ্রামের সন্তান ভাষাসৈনিক গোলাম আকবর চৌধুরীর সঙ্গে।
মুক্তিযুদ্ধের উষালগ্নের উত্তাল দিনগুলোতে; বিশেষ করে নারীদের সংগঠিত করতে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেন তিনি। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে সাজেদা চৌধুরীকে নারী কোটায় সংসদ সদস্য করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি সপরিবারে ভারতে চলে যান। আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য তিনি কলকাতার গোবরাতে নার্সিং ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন ক্যাম্পের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। স্বাধীনতার পর তিনি ছিলেন নারী ও যুদ্ধশিশু পুনর্বাসন বোর্ডের পরিচালক।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রথম দলীয় কাউন্সিল হয় ১৯৭৮ সালে। ওই কাউন্সিলে সাজেদা চৌধুরীকে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদ আবদুর রাজ্জাক দল থেকে বেরিয়ে আলাদা সংগঠন করলে দলের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন সাজেদা চৌধুরী। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সর্বসম্মতির সিন্ধান্তে ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত সাজেদা চৌধুরী দলের পূর্ণাঙ্গ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন।

সাজেদা চৌধুরী ১৯৯১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে ফরিদপুর-২ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তিনি সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। পরে তাঁকে সংরক্ষিত নারী কোটায় এমপি করে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দশম জাতীয় সংসদে বিজয়ী হলে সাজেদা চৌধুরীকে সংসদ উপনেতা করা হয়।

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে পার্বত্য শান্তিচুক্তি বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। ২০১০ সালে তিনি স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। ২০০০ সালে হন ওমেন অব দি ইয়ার। একাদশ জাতীয় সংসদে তিনি ভোটে লড়ছেন ফরিদপুর-২ আসন থেকে।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x