বেলজিয়ামে কাদেরী কিবরিয়ার রবীন্দ্র সন্ধ্যা

সঞ্চালক/সংগঠক মানিক পাল, শিল্পী কাদেরী কিবরিয়া, জনাব কিবরিয়ার ছাত্র/সংগঠক শফিউল ইসলাম শফিক

সুরের যে কোন ভাষা নেই তা যে কোন শ্রোতা-দর্শক উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন ২৯শে মে’র সন্ধ্যের কাদেরী কিবরিয়ার একক রবীন্দ্র সংগীত অনুষ্ঠানটিতে। ব্রাসেলসের একটি মাঝারি আকারের মিলনায়তন, যাতে উপচে পড়া দু ‘শর উপর দর্শকের দশ শতাংশ ইউরোপীয়ানরাও প্রায় তিন ঘন্টা কাদেরী কিবরিয়ার কণ্ঠে রবীন্দ্র সংগীত শুনতে শুনতে যেন সম্বিৎই হারিয়ে ফেলেছিল। উনার সুললিত কন্ঠের মাধুর্যতা যেন গানের কথা গুলোকে গৌণ করে দিয়ে সুরের প্রাধান্যতাতেই পুরো অনুষ্ঠানটিকে শাসন করে গেছে। আশ্চয্য হয়ে লক্ষ্য করা গিয়েছিল যে মিলানায়তনে উপস্থিত ছোট্ট বাচ্চারাও যেন সুরের মূচ্ছনায় নিজেদের খেলা ভুলে চুপ হয়ে গিয়েছিল। বেলজিয়ামের শ্রোতা-দর্শকরা এই এক অভূতপূর্ন “রবীন্দ্র সন্ধ্যার” স্বাক্ষী হয়ে রইলেন।

দীর্ঘ ৪০ বছরের অভিজ্ঞাতা নিয়ে সংগীত শিল্পী কাদেরী কিবরিয়া দেশের গন্ডি পেরিয়ে ইউরোপ-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়ার রবীন্দ্র সংগীত শ্রোতাদের এই সত্তর ছুঁই ছুঁই বয়সেও যে এখনো সম্মোহিত করে রেখেছেন সে কথা মুহুমুহু করতালির মধ্যে উল্লেখ করতে গিয়ে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক মানিক পাল বললেন – শিল্পী কাদেরী কিবরিয়া আজ বাংলাদেশের একটি “রবীন্দ্র প্রতিষ্ঠান”, উনার কণ্ঠের রবীন্দ্র সংগীত শুনেই বাংলার একটি প্রজন্ম লালিত হয়েছিল ….. । কাদেরী কিবরিয়ার একসময়ের ছাত্র শফিউল ইসলাম শফিক বললেন – গুরুর গলায় প্রথম যখন রবীন্দ্র সংগীত শুনি তখন মনে হয়েছিল স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা যেন উনার কণ্ঠে বসে আছেন।

উদাত্ত কণ্ঠে শিল্পী কাদেরী কিবরিয়া বঙ্গবনধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্যে শুরু করলেন রবীন্দ্র সংগীত – “তুমি কি কেবলই ছবি ……” দিয়ে। রবীন্দ্র সংগীত ছাড়াও অতীত দিনের স্নিগ্ধ সোনালী গান গুলো নিজস্ব ভঙ্গীতে গাইবার যে সমান পারদর্শিতা এখনও উনি রাখেন সেটি উনার কণ্ঠের – “এই সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায় একি বন্ধনে জড়ালে গো বনধু …..” প্রমান করিয়ে দিয়েছিল। কিবরিয়ার কণ্ঠে সুকান্তের “রানার …….. ” গানটি যে শুধু শ্রোতাদের আপলুতই করেছিল তাই নয়, কাউকে কাউকে কাঁদিয়েও দিয়েছিল। এমনকি হুইল চেয়ারে বসা মিসেস এলি রফিকের বিমুগ্ধতার সার্বক্ষণিক আনন্দঅশ্রূ ও কারো চোখ এড়ায়নি। অনুষ্ঠানের শেষ পরিবেশনাটি ছিল ডি.এল.রায়ের – “ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা …… ” গানটি, যাতে কোন শ্রোতা তাঁদের গলা মেলানোর কোন কার্পণ্যও করেননি।

অনুষ্ঠানটিতে সঙ্গীতের উৎকৃষ্টতা, পরিবেশনার মুন্সিয়ানা এবং সর্বোপরি সংগঠকদের নৈপূর্ণতা বেলজিয়ামের রবীন্দ্রানুরাগীদের মনে বহুদিন দাগ কেটে রাখবে বলে দর্শকরা মত প্রকাশ করেন।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments