বিএনপির নেতাদের নিষ্ঠুর ও অকৃতজ্ঞ বললেন ইতালী বিএনপির শীর্ষ নেতা খন্দকার নাসির উদ্দিন।
খন্দকার নাসির: বাংলাদেশ জাতীয় একাদশ সংসদ নির্বাচন ২০১৮নিয়ে কিছু লিখব ভাবছি। এই নির্বাচনের অনেক কিছুতেই নতুনত্ব। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জেলখানায় বন্দি। দলীয় সরকার দলীয় নির্বাচন কমিশন দলীয় প্রশাসন দলীয় বিচার বিভাগের গৃহপালিত বিচারপতি সবকিছু বহাল থাকার পরও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে অংশগ্রহণ কিছুটা স্বাভাবিক ও কিছুটা অস্বাভাবিক।বিএনপির দলীয় মনোনয়ন দেয়া শেষ তবে মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় পারিবারিক আধিপত্য বিদ্যমান যেখানে দলের নিবেদিত প্রাণ নেতা কর্মীদের বাদ দিয়ে পুরনো নেতা অথবা সাবেক নেতাদের পরিবারের সদস্যদের বেশি মূল্যায়ন করা হয়েছে।ঢাকা যেহেতু বাংলাদেশের রাজনীতি তাই ঢাকা দিয়েই শুরু করছি। ঢাকার কিংবদন্তি ঢাকা ২আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নির্বাচন করতে পারবেন না আইনের জটিলতার কারণে। ঢাকা ২আসনের আমানউল্লাহ আমান সাহেবের বদলে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তার ছেলে অতি যুবক রাজনীতিতে একেবারেই অনভিজ্ঞ ছেলেকে। হয়ত এ আসনে আরও অনেক নেতা আছেন কিন্তু তাদেরকে না দিয়ে আমানউল্লাহ আমান সাহেবের পারিবারিক আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে অথবা আমানউল্লাহ আমান সাহেব যাতে বেজার না হোন তাই তার ছেলেকে মনোনয়ন। অর্থাৎ আগামী ২০/৩০ বৎসর এই আসনে বিএনপির যতবড ত্যাগী নেতা হন না কেন আমানউল্লাহ আমান সাহেবের পরিবারের বাহিরের কারোর মনোনয়ন পাওয়ার রাস্তা আপাতত বন্ধ। ২০১৫ সালে বেগম খালেদা জিয়া যখন গুলশান কার্যালয়ের ভিতরে ৯০দিনের মত অবরুদ্ধ ছিলেন তখন আমানউল্লাহ আমান সাহেব তার ছেলেকে বিয়ে দিয়েছেন ঘটা করে সংসদ ভবন প্লাজায়। তখন আমানউল্লাহ আমান এক বারের জন্য দলের নেত্রী অবরুদ্ধ এই কথাটা চিন্তা করেননি। আর আজকে যখন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জেলখানায় বন্দি তখন আমানউল্লাহ আমান সাহেবের পরিবারের কথা চিন্তা করে তার অল্পপরিচিত ছেলেকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। কত মহান কত উদার আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান-একবার ভেবেদেখেছেন কি??আসা যাক ঢাকামহানগরের আরেক কিংবদন্তি জনাব সাদেক হোসেন খোকার পারিবারিক আধিপত্য নিয়ে—-এই আসনটিতেও জনাব সাদেক হোসেন খোকার অল্পপরিচিত রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ ইন্জিনিয়ার ছেলেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এ আসনে আরও একাধিক যোগ্য ও ত্যাগী নেতা আছেন কিন্তু তাদেরকে না দিয়ে জনাব সাদেক হোসেন খোকার ছেলেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে শুধুমাত্র সাদেক হোসেন খোকার পরিবারকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য। ঢাকার একজন কমিশনার থেকে বিএনপির এম পি প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রী মেয়র বনে যাওয়া এই সাদেক হোসেন খোকার জন্য ওয়ান ইলেভেনের সময় খন্দকার দেলোয়ার হোসেন পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি।সেদিন সংস্কারপন্থীরা সাদেক হোসেন খোকার জনবল বাহুবলের জন্যই পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় নিজেদের কব্জায় রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। সেদিন সাদেক হোসেন খোকা বিএনপি জিয়া পরিবার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও জনাব তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর জন্য সামান্য সহানুভূতি দেখানোর চেষ্টা করেননি অথবা দেখাননি। আর আজকে যখন দেশনেত্রী জেলখানায় আর বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জনাব সাদেক হোসেন খোকার পরিবারকে খুশি রাখতে মনোনয়ন দিয়েছে সাদেক হোসেন খোকার রাজনীতি না জানা ছেলেকে। একজন সামান্য কমিশনার থেকে বিএনপির এত বড় নেতা বনে যাওয়া সাদেক হোসেন খোকা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট না করলে কি চলত না ? টাকার লোভ না করলে এখন তো তিনি নিজে নির্বাচন করতে পারতেন এবং দলের জন্য ভাল ভূমিকাও রাখতে সক্ষম হতেন। নাজমুল হুদা থেকেশুরু করে ঢাকার আরও অনেক নেতা আছেন সবাইকে নিয়ে বিস্তর লিখতে গেলে মাসের পর মাস চলে যাবে। এবার আরও দুচারজন সিনিয়র মরহুম বা সাবেক নেতাদের কথায় আসি। আমাদের সাবেক মহাসচিব মরহুম আঃ মান্নান ভূইয়া।ওয়ান ইলেভেনের সংস্কারপন্থীদের মূল নাটকের নাট্যকার। জনাব আঃ মান্নান ভূইয়া ১১বৎসর মহাসচিব থেকেছেন বিনা কাউন্সিলে ।মন্ত্রীত্ব পেয়েছেন দুইবার। নিজের স্ত্রীকে সরকারি চাকরিতে ভাল পোস্টিং দিয়েছেন মন্ত্রী হওয়ার সুবাদে। বিএনপি তাকে অনেক কিছু দিয়েছে কিন্তু কিন্তু ওয়ান ইলেভেনের সময় তার এই নগ্ন ভূমিকার মাশুল এখনও গুনতে হচ্ছে বিএনপি জিয়া পরিবার এবং বিএনপির লাখ লাখ নেতা কর্মীদের। সেদিন আঃ মান্নান ভূইয়া যদি দলের বিপক্ষে চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান না নিতেন আজকে হয়ত ইতিহাস ভিন্ন ও হতে পারত।কর্ণেল অলি আহমেদ সাহেব। যাকে ১৯৯৬সালে দুটি আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল কথা ছিল উনি একটি আসন জহির খান (নাম ভিন্ন ও হতে পারে)কে ছেড়ে দিবেন। কিন্তু জিতে যাওয়ার পর জহির খান টিক্কা খানকে না ছেড়ে তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে এম পি বানালেন –বিরোধ শুরু এখান থেকে। পরবর্তীতে ২০০১সালের সরকারের মন্ত্রীত্ব না পেয়ে দল ভেঙে বিচৌধুরীর সাথে ঐক্য করে বিএনপির ১২টা বাজালেন। কিন্তু কি পেয়েছেন বিনিময়ে??কিছু ই না।তবে বিএনপির ক্ষতি যা করার তা করে ফেলেছেন।অধ্যাপক বি চৌধুরি ২০০১সালে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী করার ১৫ দিনের মাথায় রাষ্ট্রপতি করা হলো। তার আসনে লেবু কাজী মোমেন উল্লার মত যোগ্যতা সম্পন্ন নেতা থাকার পরও মনোনয়ন দেয়া হল তার অতি পাকনা ছেলে মাহীকে। এই বি চৌধুরি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর আর সময় পেলেন না শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করার মত।বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য ২০ দিন আমেরিকা থাকার সুযোগে বি চৌধুরি তৎকালীন সেনাপ্রধান হারুন অর রশিদের সাথে বংগভবনে গোপন সভা করলেন যার পরণতিতে বিএনপি তাকে পদচ্যুত করতে বাধ্য হল।সেদিন যদি বি চৌধুরির আসনে মাহীকে মনোনয়ন না দিয়ে বিএনপির অন্য কোন নেতাকে মনোনয়ন দেয়া হত তাহলে আজকে ইতিহাস ভিন্ন হত পারত।এখন বি চৌধুরি শেখ হাসিনার মধ্যে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিচ্ছবি দেখতে পান কিন্তু বাকশাল আর খুন গুম অপহরণ প্রতিচ্ছবি দেখতে পান না ক্ষমতার মোহে অন্ধ বি চৌধুরি ।আমাদের আরেকজন সিনিয়র মরহুম নেতা জনাব সাইফুর রহমান। যিনি ১৯৯১সালে নির্বাচনে ভোটে ফেল করার পরও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আবার ২০০১সালের নির্বাচনে ২ আসনে জিতে একটিতে বসালেন তার বেয়াদব মার্কা পোলা নাসের রহমানকে। এত কিছু পেয়েও তিনি হয়ে গেলেন সংস্কারপন্থী। ওয়ান ইলেভেনের সময় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন জেলখানায় জনাব সাইফুর রহমানের মত লোকের মুখে থেকে শুনতে পেলাম একজন মানুষ জেলখানায় তার জন্য তো আর নির্বাচন অথবা দল বসে থাকতে পারে না। হায়রে নেতা আমাদের!অনেক কিছু দেখতে পাচ্ছি সোহেলের মত ত্যাগী নেতারানির্বাচন করতে পারে না সিনিয়র নেতাদের পারিবারিক স্বার্থে। ঢাকা দিয়ে শুরু ঢাকা দিয়েই শেষ করা করতে চাই। এই বৃহত্তর ঢাকার আরেকজন মহান নেতা যিনি ওয়ান ইলেভেনের সময় বিএনপিকে ধরে রেখেছেন আমাদের মরহুম মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন সাহেব। যিনি কখনও মন্ত্রী হননি বা দল মন্ত্রী করেনি। থেকেছেনমন্ত্রীর মর্যাদায়চীফ হুইপ হয়ে। তারপরও জিয়া পরিবারের বিশ্বস্ত এই নেতা ওয়ান ইলেভেনের সময় দলের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন দল খন্দকার দেলোয়ার হোসেন সাহেব কে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে দীর্ঘকাল। বিএনপির অনেক নেতা নেত্রীকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান এমপি মন্ত্রীত্ব দলীয় পদপদবী দোহাতে দিয়েছেন কোন কার্পণ্য করননি কোন নেতাদের সাথে। সেই নেতারা অনেকেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির সাথে সময়ে সময়ে বিশ্বাসঘাতকা করেছেন। বিএনপির সাধারণ কর্মীরা বিএনপি তথা জিয়া পরিবারের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল ও বিশ্বস্ত এবং নির্মোহ নিবেদিত প্রাণ। সেই তুলনায় অনেক শীর্ষ নেতা ক্ষমতার লোভী এবং স্বার্থপর। বিএনপিকে দিনেদিনে আসন ভিত্তিক পারিবারিক আধিপত্য দখল দারিত্বের অবসান ঘটিয়ে নেতৃত্বে র বিভিন্ন মুখী বিকাশ ঘটাতে হবে। যাতে করে কোন জেলা অথবা কোন আসনে কোন এক নেতা ডিগবাজি খাইলে যেন সেখানে বিকল্প নেতৃত্ব অটুট থাকে। বিএনপির সকল নেতা কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধানের শীষে প্রার্থীর জন্য কাজ করার উদাত্ত আহ্বান জানাই ।সবশেষে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জনাব তারেক রহমান সহ বিএনপির সকলের সুস্থতা কামনা করছি। ধন্যবাদ সবাইকে—-কলাম লেখক ও রাজনীতিক——খন্দকার নাসিরউদ্দিন। নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। ইতালী কেন্দ্রীয় কমিটি। ২৯/১১/২০১৮ রোম ইতালী।