প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্সে ওপর বাংলাদেশের সরকার কর বসিয়েছে, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন প্রচারণা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর দেশটির কর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নাকচ করেছেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রবাসী আয়ে কর আরোপ করেছেন এমন কথা ছড়িয়ে পড়ে সংসদে জাতীয় বাজেট পেশের পরপরই। বলা হয় আড়াই লক্ষ টাকার বেশী বাংলাদেশে পাঠালেই আয়কর দিতে হবে।
আর এর পরপরই অনেক প্রবাসী বাংলাদেশী কথিত এই করারোপের তীব্র প্রতিবাদ জানান।
তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর বলছে, বাজেটে এ ধরণের কোন প্রস্তাবই করা হয়নি।
অর্থমন্ত্রী গত ৭ই জুন জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন, তাতে করসংক্রান্ত বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়াই এসেছে ব্যবসায়ী সহ বিভিন্ন মহল থেকে।
কিন্তু হঠাৎ করেই ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে পোস্ট বা স্ট্যাটাস দিয়ে প্রবাসী আয়ে কর বসানোর এমন একটি তথ্য প্রচার করেন যা ব্যবসায়ী কিংবা অর্থনীতিবিদ – কারও পক্ষ থেকেই বলা হয়নি।
বলা হচ্ছে যে দেশের ভেতর থেকেও অনেকে পোস্ট বা স্ট্যাটাস দিয়ে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে দাবি করেছেন যে তিনি এ বাজেটে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের ওপর কর বা ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে প্রবাসীদের অনেকে তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়াও দেখিয়েছেন।
কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া বলছেন, “পুরো বিষয়টি একটি চক্রান্ত। ঈদকে সামনে রেখে একটি মহল এ ধরনের প্রচার শুরু করেছে যাতে প্রবাসীরা অবৈধ পন্থায় টাকা পাঠান”।
বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্থায়ী বা অস্থায়ী ভিত্তিতে বসবাস করেন এবং প্রতি বছর বিশেষ করে ঈদ বা এ ধরণের উৎসবের আগে দেশে তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে প্রচুর অর্থ পাঠিয়ে থাকেন।
দেখা গেছে যে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটো উৎসব, অর্থাৎ ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার দুটো মাসে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশী প্রবাসী অর্থ আসে।
বাংলাদেশ সরকারের হিসেব অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে, যার জন্য প্রায়শঃই প্রবাসীদের কৃতিত্ব দেয়া হয়।
এনবিআর-এর চেয়ারম্যান মি: ভুঁইয়া বলেন, “আমি প্রবাসীদের আশ্বস্ত করতে চাই যে শুধু এ বাজেটে কেন ভবিষ্যতেও ফরেন রেমিটেন্স বাংলাদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে কোন ধরনের করারোপ কিংবা ভ্যাট ধার্য করা হবে না”।
তিনি বলেন, “বিদেশী রেমিটেন্সকে উৎসাহিত করা হচ্ছে এবং হবে। কোন যুক্তি বা আইনে আমরা এর ওপর করারোপ করবো! ব্যাংকিং চ্যানেল বরং আমরা উৎসাহিত করি”।
রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, সরকার মানিলন্ডারিং ও হুন্ডির বিরুদ্ধে বরং আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে চায়। ঈদের আগে মানুষ যেন হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠায়, সেজন্যই এমন মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।