দাপ্তরিক বিভিন্ন কাজের ব্যস্ততার কারণে বেশ অনেক দিন যাবত ফেসবুক পেজে কিছু লিখে পোস্ট দিতে পারিনি। সময় বেশ দ্রুত চলে যায়, দেখতে দেখতে ঢাকা জেলায় দুই বছর তিনমাস দায়িত্ব পালন করেছি। এই সময়ে আইন শৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড সম্পাদন করেছি। ঢাকা জেলার মিলব্যারাক পুলিশ লাইন্সে দুইটি নতুন গেইট, একটি মহিলা ব্যারাক ও ফোর্সের জন্য বার 12 তলা ব্যারাকের নির্মাণ কাজ চলমান। অস্ত্রাগার ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, ক্যান্টিনসহ পান্থশালার কাজ ইতোমধ্যেই সমাপ্ত হয়েছে। আশুলিয়া ও দক্ষিণ কেরাণিগঞ্জ থানার জমি অধিগ্রহণের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। কলাতিয়া পুলিশ ফাঁড়ির জন্য দানশীল ব্যক্তি কর্তৃক 50 শতাংশ জমি অনুদান হিসাবে পাওয়া গেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঢাকা জেলা পুলিশের অনুকূলে 469 টি পদ মঞ্জুরী দিয়েছেন। তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তার জন্য ঢাকা জেলার আমিনবাজার হতে বাইপাইল পর্যন্ত এলাকা অত্যাধুনিক সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারীভাবে প্রায় 51 টির মত নতুন যানবাহন ঢাকা জেলা পুলিশের বহরে যুক্ত হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণসহ বড় বড় অপরাধ ঢাকা জেলায় প্রায় নাই বললেই চলে।
এতকিছুর পরও মনে হচ্ছে যত কাজ করার কথা ছিল সেভাবে করতে পারিনি। জেলার সাধারণ জনগণের জন্য পুলিশী সেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি যোগ্যতার ভিত্তিতে তাদের পুলিশ বাহিনীতে কনস্টেবল পদে নিয়োগ নিশ্চিত করেছি। মজুরীকে কেন্দ্র করে পোশাক শিল্পের আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীদের বেশকিছু সমস্যা আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করেছি। সাম্প্রতিক সময়ের টোল বাড়ানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ কেরাণিগঞ্জ এলাকার ইকুরিয়ার ঘটনায় একজনের প্রাণহানীর ঘটনা ছিল অনাকাঙ্খিত। উক্ত ঘটনায় পুলিশ চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে উক্ত বিষয় মীমাংসার চেষ্টা করলেও গত 26/10/2018 তারিখ শুক্রবারের ঘটনাটি আমার জন্য মোটেই স্বস্তিদায়ক ছিল না। আমি ব্যক্তিগতভাবে যে কোন অনাকাঙ্খিত সাংঘর্ষিক ঘটনায় প্রানহানীর ঘটনা পছন্দ করিনা। আমি পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের জন্য গর্ববোধ করি। তারা রাতদিন পরিশ্রম করে দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি জঙ্গী দমনে গুরুতর আহত এমনকি প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জন দিচ্ছেন। অন্যকোন সরকারী দায়িত্বে এ ধরণের কোন ঝুঁকি নেই। তবুও আমাদের সমালোচনা বেশি হয়।
শ্রমিকদের যথাযথ সম্মানের সাথে তাদের টোল বৃদ্ধির প্রতিবাদে জমায়েত শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিস্পত্তি করলেও গত 26/10/2018 ইং তারিখে পুলিশের উপর শ্রমিকদের অহেতুক চড়াও হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা নয়। টহল কার্যে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের ধরে Uniform খুলে নেওয়া বা তাদের জবাই করতে যাওয়ার ঘটনা সাধারণ শ্রমিকদের কর্মকান্ড বলেও বিশ্বাস করা কঠিন। কেবল তাই নয় হোটেলে আশ্রয় নেওয়া নারী পুলিশসহ সকল পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে সিলিন্ডারে আগুন দিয়ে হোটেলে নিক্ষেপ করে তাদের পুড়িয়ে মারার চেষ্টা অত্যন্ত গর্হিত কাজ বলে মনে হয়। এছাড়াও বিনা কারণে পুলিশ সদস্যদের উপর ট্রাক উঠিয়ে তাদের হত্যার চেষ্টা অত্যন্ত নিন্দনীয়। অথচ কিছু কিছু সাংবাদিকসহ তথাকথিত সুশীল ব্যক্তিদের দ্বারা পুলিশী কার্যক্রমকে যেভাবে আক্রমনাত্মক ভাষায় সমালোচিত হতে হয়েছে, তাতে ব্যথিত হই। গত দুই বছর তিন মাস নিরন্তর পরিশ্রম করে তিলে তিলে ঢাকাবাসীকে যেভাবে আমার ঢাকা জেলা পুলিশের প্রতিটা সদস্য সেবা দিয়ে গেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমার পুলিশ সদস্যদের প্রতি কতিপয় বর্বর ব্যক্তিদের এহেন আচরণ কি নিন্দনীয় নয়? দেশের সাংবাদিকসহ সকল সুশীল সমাজের কাছে প্রশ্ন তাদের কর্মকান্ড কি আদৌ দেশপ্রেমের পরিচয় বহন করে? তাদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবোধ জাগ্রত আছে বলে কি প্রতীয়মান হয়? তাদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া কি যুক্তিসংগত নয়? যারা বর্বরোচিতভাবে পুলিশ সদস্যের পোশাক খুলে নিয়েছে এবং অহেতুকভাবে পুলিশ সদস্যদেরকে আক্রমণ করে শান্তিপূর্ণ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে, তাদের খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ঢাকা জেলা পুলিশ বদ্ধপরিকর।
লেখক : শাহ মিজান শাফিউর রহমান
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার।