সদ্য আজ তার স্কুল ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করেছে। সর্বমোট ৩০ মিনিটে প্রায় ৪.৮ কি.মি. অতিক্রম করেছে , যা গতবারের তুলনায় ০.৩ কি.মি. বেশি।
তপতী বসাক, জাপান থেকে: প্রথম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিটি শিক্ষার্থী পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেবার পর আজ তাঁরা চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণ করলো | কোনো প্রতিযোগিতা নয়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্ধারিত দূরত্ব শিক্ষার্থীরা তাদের যে যার শক্তি বা সামর্থ অনুযায়ী যতবার অতিক্রম করতে পারে | এটা জাপানীজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিবছর এর বইভিত্তিক শিক্ষার বাইরে নিয়মিত অনেক ধরণের কর্মকান্ডের মধ্যে একটা |
এটা আমার দ্বিতীয় বারের মতো দেখা | আজ ছিল রৌদ্রউজ্জাল সকাল | তাপমাত্রা শীতের সকাল তুলনায় অনেকটাই বেশি ছিল | আমার দাঁড়িয়ে দেখতেই অনেক গরম লাগছিল | কিন্ত আমি অবাক হয়ে দেখলাম প্রতিটি শিক্ষার্থী বেশ মজা করে পাশে বন্ধুর সাথে গল্প করতে করতে দৌঁড়াচ্ছে | দেখতে ক্লান্ত, কিন্ত মনটা অনেক সুদৃঢ় | যেমন, আমার সদ্যকে দেখি সময় শেষ হবার পর সবাই হেঁটে আসছে আর সে দৌঁড়ে আসছে, যদিও দেখে মনে হচ্ছে অনেক ক্লান্ত | আমাকে সে বলে, “মা আমি এখনো আরো দৌঁড়াতে পারবো”| ছেলের এমন মনের জোর দেখে আমি বিস্মিত হলাম, আর সেইসঙ্গে বিনয়াবনত হলাম বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে- জাপানীজ প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রম এর কাছে এবং সর্বোপরি পুরো পদ্ধতির কাছে |
হ্যাঁ, এভাবেই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে পুস্তকভিত্তিক পড়াশুনার পাশাপাশি প্রতিটি শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তূত করা হয় | আর এভাবেই তাঁরা নবম শ্রেণী পাশ করার সাথে সাথে গ্রন্থগত বিদ্যার পাশাপাশি একজন মানুষ হিসেবে মৌলিক গুণাবলীতেও সমৃদ্ধ হয়ে যায় | আর এর ভিত্তিটা স্থাপন হয় প্রাথমিক শিক্ষায় | এ কারণেই শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা শিক্ষার সঙ্গে ঘরমুছা থেকে বাথরুম পরিষ্কার, কৃষি থেকে কাঠমিস্ত্রি, খাবার পরিবেশন থেকে ক্লাসের ডায়াসে দাঁড়িয়ে উপস্থাপনা, পিয়ানো-বাঁশি বাজানো থেকে নাটক-গান করা এবং তা বিশাল অডিটোরিয়াম ভর্তি দর্শকের সামনে উপস্থাপন করা ইত্যাদি আরো অনেক অনেক কিছু তাদের জানা হয়ে যায়, যা পরবর্তী জীবনে তাঁদেরকে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হতে সাহায্য করে | আর এতো কিছু সম্ভব হয় পাঠ্যক্রম এর পাশাপাশি শুধুমাত্র শ্রেণী শিক্ষকের আন্তরিকতার মাধ্যমে |