সময় নিউজ ডেক্স: ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার গাজিরটেক ইউনিয়নের চর সর্বান্দিয়া গ্রামের ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রী এক কিশোরী’র স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে বখাটেদের হুমকিতে। এর আগে ওই কিশোরীকে ধর্ষনের চেষ্টা চালায় বখাটেরা। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার কারনেই নিয়মিত হুমকি দেয়া হচ্ছে ওই কিশোরী ও তার পরিবারকে।
অভিযুক্ত ওই বখাটে ও ধর্ষন চেষ্টা মামলার আসামীরা হচ্ছে হরিরামপুর ইউনিয়নের ইনতাজ মোল্যার ডাঙ্গী গ্রামের শেখ আজিজের ছেলে মাইনদ্দিন(২৫) এবং একই গ্রামের মালেক মৃধার ছেলে আলামিন মৃধা(২০) ও তার সাঙ্গ পাঙ্গরা।
ভুক্তভোগী ওই কিশোরী জানায়, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে ওই কিশোরী প্রাইভেট শেষে বাড়ি ফেরার সময় স্থানীয় বাদশা মিয়ার বাড়ির সামনের রাস্তার ফাঁকা জায়গায় মোটর সাইকেল নিয়ে মেয়েটির গতিরোধ করে মাইনুদ্দিন ও আলামিন। তারা কিশোরীকে হুমকি দিয়ে বলে, ‘তোর বাপ আমাগো নামে মামলা দিছে তোরে এখন তুইলা নিয়া গেলে তোর বাপে কয়ডা মামলা দিব। বাচঁপার চাইলে তোর বাপরে দিয়ে মামলা উঠাইয়া ফেলা’।
কোন আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় বখাটেদের ভয়ে মেয়েটি এখন স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে বলেও জানায় মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা। হুমকির পর শুক্রবার সন্ধার দিকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বাদী তার মেয়ের নিরাপত্তার জন্য চরভদ্রাসন থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করতে গেলে তা আমলে নেয়নি বলে অভিযোগ করেন মামলার বাদী।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা এস.আই মো. শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় মেয়েটির বাবা আমার কাছে আসলে আমি ডিউটি অফিসারের নিকট সাধারন ডাইরি করতে পাঠাই পরে সে কি করেছে আমার জানা নাই। আসামী ধরার ব্যাপারে তিনি বলেন মামলা হওয়ার পর থেকে আমি গাজীপুরের নির্বাচন সহ বিভিন্ন কাজে ব্যাস্ত থাকায় আসামী ধরা সম্ভব হয় নাই। পুলিশ সর্বত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আসামীদের ধরতে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে চরভদ্রাসন থানার অফিসার ইনচার্জ রাম প্রসাদ ভক্ত হুমকি দেয়ার বিষয়টি সঠিক নয় উল্লেখ করে বলেন, আমরা তো আসামী খূজে পাচ্ছি না, তারা পলাতক। আসামী কোথায় আছে সেমন তথ্য তো মেয়ের পরিবার দিতে পারছে না। তথ্য দিলে আসামী ধরতে তো আমাদের সমস্যা নেই। তারপরও পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আসামীদের ধরতে।
ধর্ষন চেষ্টা মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মামলাটি এসআই শহীদুল ইসলাম তদন্ত করছিলেন, কিন্তু সে ট্রেনিং এ চলে যাওয়ায় এখন নতুন কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করবেন।
এই বিষয়ে ফরিদপুর সদর সার্কেল এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতিকুল ইসলাম জানান, তিনি ছুটিতে ঢাকা রয়েছেন। বিষয়টি তিনি দেখবেন। আসামী ধরার ব্যাপারে যদি পুলিশের গাফলতি থাকে সেটাও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ১জুন রোযার মধ্যে দুপুর ২টার দিকে প্রতি দিনের ন্যায় বাদির মেয়ে ইন্তাজ মোল্যার ডাঙ্গী বাহারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা সংলগ্ন জামে মসজিদের মক্তবে কোরাআন শরীফ পড়ার জন্য যায়। ঐ দিন মসজিদের ইমাম ব্যাক্তিগত প্রয়োজনে মক্তবের শিক্ষার্থীদের ছুটি দিলেও তা জানতোনা মেয়েটি। সে মসজিদে কোরআন পড়ার জন্য একা বসেছিল। হঠাৎ মামলার বখাটে মাইনুদ্দিন মেয়েটিকে বলে মেয়েটির চাচা তাকে বাহিরে ডাকে। এ কথা বলে মেয়েটিকে বাইরে নিয়ে আসে। মেয়েটি মাদ্রাসার ফাকা মাঠে গিয়ে তার চাচাকে দেখতে না পেয়ে তার চাচা কোথায় জানতে চাইলে মাইনউদ্দিন মেয়েটির হাত ধরে মাদ্রাসার পিছনে পাটক্ষেতের পাশে নির্জন স্থানে নিয়ে যায় এবং কু প্রস্তাব দিয়ে ধর্ষনের চেষ্টা চালায় এ সময় বখাটে আলামিন মৃধাও মাইনদ্দিনের সাথে ছিল। ওই সময় মেয়েটির চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে আসামীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় মেয়েটির বাবা গত ৩ জুন চরভদ্রাসন থানায় নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন মামলা দায়ের করেন।
এই খবর পেয়ে সাংবাদিকরা এলাকায় গেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধীক ব্যাক্তি অভিযুক্তদের বখাটে ও খারাপ ছেলে বলে জানান।
বখাটে মাইনুদ্দিন ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ভুগোল ও পরিবেশ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। অপরদিকে বখাটে আলামিন ফরিদপুর সদর থানার বাকীগঞ্জ ইসলামিয়া ফাজিল(বিএ) মাদ্রাসার আলীম পরিক্ষার্থী।