মনির মোল্যা : গ্রামবাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে এক সময়ে যাঁতাকল ব্যবহার হতো। কালের বিবর্তনের ফলে ঐতিহ্যবাহী যাঁতাকল আজ বিলুপ্তির পথে। গ্রামের ঘরে ঘরে এখন আর আগের মতো যাঁতা চোখে পড়েনা। এক সময় গ্রাম ছাড়া যাঁতা কিংবা যাঁতা ছাড়া গ্রাম কোথাও ছিলো না। যেখানেই বসতি সেখানেই ছিলো যাঁতা। আগে ডাল, গম ও পায়রা ভাঙ্গানোর কোন যন্ত্র বা মেশিন ছিলো না। যাঁতা দিয়ে ডাল ও গম ভাঙ্গানো হতো। কিন্তু ঐতিহ্য সেই যাঁতা আজ একেবারেই হারিয়ে যাচ্ছে।
যাঁতা নিয়ে গ্রামবাংলার মানুষ বহুভাবে গল্প করতো। কালের বিবর্তনে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছে একাধিক রাইস মিল ও গম পিষে আটা তৈরি করার মেশিন। দেশের যে সব গ্রামে এখনও বিদ্যুৎ পৌছায়নি সেসব এলাকায় স্যালো মেশিনের সাহায্যে মিনি রাইস মিলে গম ভাঙ্গানো হয়। এছাড়াও সেলোমেশিনের তৈরি ভ্রাম্যমান রাইস মিলতো আছেই। এজন্য গ্রামবাংলার ঐতিহ্য যাঁতার প্রচলন দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। তাই ৬৮ হাজার গ্রামে এখন যাঁতার অস্তিত্ব আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। গ্রামের নববধুরা যাঁতার সাহায্যে গম-পায়রা, যব, খেশারী, মুসুরী, মুগ, মোটর, সোলা ও মাষ কালাই পিষা নিয়ে সারা বছর ব্যস্ত থাকতো। এছাড়াও গ্রামবাংলার শত শত নারী শ্রমিক এই যাঁতার উপর নির্ভরশীল ছিল।
যাঁতাতে পিষা আটা দিয়ে বানানো পিঠা ও পায়রা পিষা ছাতু বেশ সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর বলে বয়স্ক মানুষের কাছে বেশ প্রিয়। প্রতিদিন বিকালে ও কাকডাকা ভোরে যাঁতার ঘ্যাড় ঘ্যাড় শব্দে গাও-গ্রাম মূখরিত হয়ে উঠতো। পাড়া গায়ে ঢুকলেই ঘর ও বারান্দার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসতো যাঁতা ঘুড়ানোর শব্দ। সেই সব শব্দ আজ আর শোনা যায় না। আগের নববধুরা স্বামীর ঘরে এসেই শাশুড়ীর কথায় গম-পায়রা ও ডাল পিষার জন্য যাঁতা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তো। নববধুরা এখন আর সেই যাঁতা চোখে দেখে না। তবে গ্রাম অঞ্চলে এখনও একটি প্রবাদ বাক্য মানুষের মূখে রয়েছে যাঁতার ছাতু খেতে খুব মধু।