আবু তালিব হোসাইন মিঠু, ইতালি থেকেঃ ইতালির দুঃসময় চলছে, আশা করি দ্রুত সবকিছু স্বাভাবিক হবে। রাত যত গভীর হয় প্রভাত তত এগিয়ে আসে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে,করোনার পাশাপাশি আমাদেরকে ভূয়া খবরের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করতে হচ্ছে। যেমন,
এক, ল্যাটিন আমেরিকান স্প্যানিশ ভাষী এক বাচ্চার তাঁরা দেখা ভিডিওকে ইতালির মা হারানো বাচ্চার কান্না হিসেবে সাব্যস্ত করছে।
দুই, আরটিভি এবং নয়াদিগন্ত পথে পরে থাকা এক ব্যাক্তির লাশকে ইতালির পথেপ্রান্তে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে এমন খবর পরিবেশন করছে। ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক। কিন্তু বেরগামো বাদে প্রতিটা শহরের হাসপাতালগুলায় যথেষ্ট পরিমাণে বেড খালি আছে। শুধুমাত্র ভেনেতু প্রদেশে রোগীর অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া পাঁচটা হাসপাতাল পুনরায় চালু করেছে। প্রতিটা শহরে অস্থায়ী হাসপাতাল বানানো হয়েছে। প্রতিটাতে আধুনিক সর্বোচ্চ সুবিধা বিদ্যমান। ইতালি পৃথিবীর সবচেয়ে উৎকৃষ্টমানের ভেন্টিলেটর মেশিন তৈরি করে। অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জামে নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। ওষুধ শিল্প এবং গবেষণাতেও পৃথিবীর অন্যতম অগ্রগামী দেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর তালিকায় ইতালি স্বাস্থ্য সেবায় বিশ্বে দ্বিতীয়।
তিন, একাত্তর টিভি প্রচার করছে ইতালিতে এখন দুটি রুটির বেশী দেওয়া হচ্ছে না। সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাদের সুপারশপ এবং লোকাল মার্কেটে ভরপুর খাবার বিদ্যমান। সরকার লকডাউনের আগের চেয়ে বেশী পরিমাণে খাবার সরবরাহ করে খাবারের দাম কমিয়ে দিয়েছে। জনগণের যেন কষ্ট না হয় এবং লকডাউনকে পুঁজি করে কেউ যেন সুযোগ নিতে পারে না। সুপারশপের বাইরে লম্বা সিরিয়ালের ছবি ব্যবহার করছে। সুপারশপগুলাতে একই সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণের লোকদের প্রবেশ করতে দিচ্ছে। যার কারনে সবায়কে ব্যস্ত সুপারশপের বাইরে সর্বোচ্চ মিনিট পনের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সব এলাকায় এমন হচ্ছে না।শুধুমাত্র ঘনবসতি এলাকার জনপ্রিয় সুপারশপে এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
চার, ইতালি প্রবাসী বাঙালীদের ছবি যোগাড় করে ভুঁইফোড় অনলাইন পোর্টাল এবং ফেসবুক পেজগুলা করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অথবা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে এমন সংবাদ পরিবেশন করছে। এখন পর্যন্ত মিলানের গোলাম মাওলা ভাই বাদে বাংলাদেশী কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেনি। স্বাভাবিকভাবে বা অন্য অসুস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তাদেরকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে এমন সংবাদ ঢালাওভাবে প্রচার করছে। বাংলাদেশে ইতালি প্রবাসীর এলাকার দুষ্ট লোকেরা স্থানীয় প্রশাসনকে তথ্য দিচ্ছে যে, ইতালিতে অবস্থান করা প্রবাসী ব্যাক্তিটি এই মুহুর্তে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। প্রশাসন পুলিশ সহকারে প্রবাসীদের বাড়িতে তল্লাশীতে যাচ্ছে। যখন পাচ্ছে না তাদের পরিবারের সদস্যদের হয়রানী করছে।
পাঁচ, ১৩ শতাব্দীর পূর্বে ইতালিয়ান ভাষায় সাধু এবং চলিত ভাষা বিদ্যমান ছিল। কবি সাহিত্যকরা সাধু ভাষায় লিখতেন। সমাজের উচ্চ শ্রেণীর লোকেরা সাধু ভাষা ব্যবহার করতেন। চলিত ভাষায় কৌতুক এবং অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি লিখিত হত। মহাকবি দান্তে তার “ডিভাইন কমেডি” চলিত ভাষায় লিখেন।পরবর্তী সময়ে ডিভাইন কমেডি এতটায় প্রচার,প্রসার এবং প্রভাব বিস্তার করে যে ইতালিয়ান ভাষায় সাধু ভাষা বাতিল হয়ে যায়। বহু চিত্রকর এবং ভাস্কর তাদের চিত্রকর্ম এবং ভাস্কর্যে ডিভাইন কমেডির বিভিন্ন ঘটনাবলি চিত্র এবং ভাস্কর্যের মাঝে ফুটিয়ে তোলেছেন। যারা ইতালির চার্চগুলা পরিদর্শন করবেন তারা দেখতে পারবেন প্রতিটা চার্চেই প্রচুর চিত্রকর্ম এবং ভাস্কর্যের উপস্থিতি। পুরো ইতালির প্রতিটি ভবন,স্থাপনা এবং রাস্তায় চিত্রকর্ম এবং ভাস্কর্যে ভরপুর।
১৩ শতাব্দীতে বলোনিয়ায় শহরে প্রতিষ্ঠিত “বাসিলিকা দি সান পাত্রনিয়ো” গীর্জায় “জভান্নি দা মোদেনা” অংকিত “দ্যা ইনফের্নো” নামের এক ফ্রেস্কো বিদ্যমান। এই ফ্রেস্কো দান্তের ডিভাইন কমেডি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শিল্পি এঁকেছিলেন। এরকম অনেক কিছুই সারা পৃথিবীতে বিদ্যমান। যেমন শীয়া মুসলিমদের বিভিন্ন মাজহাবে নবীর চিত্র অংকন করে।
২০০১ সাল এবং ২০০৬ সালে আল ক্বায়েদা এই গীর্জাটিকে ধ্বংস করে দেবার ষড়যন্ত্র করেছিল কিন্ত ইতালিয়ান রাষ্ট্রিয় গোয়েন্দা বাহিনী এই পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেয়। নবী (সঃ)কে বহু জায়গায় বহু সময় অপমান করেছে।
এমনকি নবীকে প্রহার করা হয়েছে। আল্লাহ তা’য়ালা সরাসরি কারো উপর গজব নাজিল করেননি। ৫০০ বছর পর শুধুমাত্র এই চিত্রকর্মের কারনে ইতালির করোনা আক্রান্ত হওয়ার সূত্র খোঁজা হাস্যকর।
লেখকঃ আবু তালিব হোসাইন মিঠু ইটালী, নাপলী











