আপনজনের এই সংবর্ধনা বিরল ঘটনা: এলজিআরডি মন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি : লাল, নীল, হলুদ, সাদা, গোলাপি। ফুলে ফুলে সাজানো হয়েছে সুবিশাল মঞ্চ।আড়ম্বরপূর্ণ এই আয়োজন যাকে ঘিরে তিনিও ব্যক্তিত্ব, মেধা ও দক্ষতায় দেশসেরাদের একজন। ফরিদপুরের মাটি, আলো, বাতাসে তার বেড়ে ওঠা। তারপর ধীরে ধীরে নিজেকে বিকশিত করেছেন। তিনি একজন কর্মবীর। আলোকিত মানুষ। আধুনিক ফরিদপুরের উন্নয়নের রূপকার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

ঢাকাস্থ বৃহত্তর ফরিদপুরবাসী গুণী এই মানুষটিকে শ্রদ্ধা জানাতে আয়োজন করেছিল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের। এ উপলক্ষে সোমবার সন্ধ্যায় মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল জাতীয় সংসদ ক্লাব প্রাঙ্গণ।

রঙিন আলোয় সাজানো হয়েছে অনুষ্ঠানে প্রবেশস্থল। সরকার ও এলজিআরডি মন্ত্রীর উন্নয়নের তথ্যচিত্র সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন। লাল গালিচা পাতা ছিল আমন্ত্রিত অতিথিদের সম্মান জানাতে।

ফরিদপুরবাসীর ভালোবাসা মুগ্ধ মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আপ্লুতও কণ্ঠে বললেন, ‘জীবনে অনেক সংবর্ধনা পেয়েছি। দেশে কিংবা বিদেশে। কিন্তু আজ আপনজনের এই সংবর্ধনা আমার জীবনে বিরল ঘটনা।’

ফরিদপুরের মানুষ তার অতি আপনজন। বললেন, ‘আমি যেখানেই যাই, ফরিদপুরের কথা বলি। সেদিন দিনাজপুরে এক অনুষ্ঠানে একজন বললেন, আপনি শুধু ফরিদপুরের কথা বলেন। আমি বললাম, ফরিদপুরের মানুষ আমায় ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিল বলে আজ আমি এই পর্যায়ে এসেছি। তাহলে আমি ফরিদপুরের কথা না বলে কার কথা বলব?’

ফরিদপুরের গণমানুষের এই নেতা বললেন, আগামীতে সুযোগ পেলে সকলের প্রচেষ্টায় ফরিদপুরকে বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ জেলায় পরিণত করবেন। (মন্ত্রীর পুরো বক্তব্য পড়ুন নিচে)

শুধু ফরিদপুরই নয় মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ জেলার সংসদ সদস্য, বিশিষ্ট রাজনীতিক, ব্যবসায়ী নেতা এবং সাধারণ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন খন্দকার মোশাররফ হোসনকে শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা জানাতে। এসেছিলেন মন্ত্রিসভার বর্তমান ও সাবেক একাধিক সদস্য।

অনুষ্ঠানে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ‘বৃহত্তর ফরিদপুরে যত উন্নয়ন সেটা বর্তমান সরকারের এলজিআরডি মন্ত্রীর হাত ধরেই। আমাদের এই অঞ্চলের উন্নয়নে তার অবদান অনেক বেশি। তিনি আগামী নির্বাচিত হলে ফরিদপুরকে আরও এগিয়ে যাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্বে তিনি আমাদের বৃহত্তর ফরিদপুরের চেহারা আরও পাল্টে দিবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান বলেন, ‘আমাদের বৃহত্তর ফরিদপুর খুব পিছিয়ে ছিল। বর্মমানে আমাদের রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সবকিছুর প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। তিনি আবার নির্বাচিত হয়ে সেই উন্নয়নকে আরও এগিয়ে নিবেন। তার হাত ধরেই এগিয়ে যাবে ফরিদপুর।’

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের পিছিয়ে পড়া ফরিদপুর নতুন রুপ পেয়েছে, এটা সম্ভব হয়েছে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনর কারণে। আমাদের ফরিদপুর যার হাত ধরে এগিয়ে গেছে তার হাত ধরেই উন্নয়নের যেসব ঘাটতি রয়েছে সেটাও করতে হবে। মাননীয় মন্ত্রী আবার নির্বাচিত হয়ে অঅরও কিছু নতুন রূপ দিতে হবে। আমাদের শিল্পায়ন, গ্যাসসহ বিশ্ববিদ্যালয় পাওয়ার পথ তাকেই তৈরি করে দিতে হবে।’

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এ কে আজাদ বলেন, ‘ফরিদপুরে জুট মিল ছাড়া কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান নেই। মাননীয় এলজিআরডি মন্ত্রী আগামীতে আবার ক্ষমতায় আসলে ফরিদপুরে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি একটি ফ্যাশন টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে গড়ে তোলার দাবি জানাচ্ছি। যেখান থেকে আমাদের ছেলেমেয়েরা উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে পোশাক শিল্পে ভূমিকা রাখবে।’

অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব রাজিব খান। আরও বক্তৃতা করেন সংসদ সদস্য মো. জিল্লুল হাকিম, নাহিম রাজ্জাক, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য কামরুন্নাহার চৌধুরী লাভলী, উম্মে রাজিয়া কাজল, রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক ভিপি শাহরিয়ার রুমী, নাট্যজন পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিএফইউজের মহাসচিব শাবান মাহমুদ,ফরিদপুর ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট শামীম হক ।স্বেরাচার বিরোধী নেতা আবদুল বাতেন অনুষ্ঠানে এলজিআরডি মন্ত্রীর বণার্ঢ্য জীবন-কর্ম তুলে ধরেন। এছাড়া ফরিদপুর অঞ্চলের উন্নয়ন নিয়ে একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়।

সংবর্ধনায় এলজিআরডি মন্ত্রী যা বলেন

‘আমি ফরিদপুরের একজন সন্তান। ২০০৮ সাল থেকে মন্ত্রী হিসেবে আপনাদের সেবায় নিয়োজিত আছি। আপনারা অনেকেই বলেছেন, ফরিদপুর একটি অবহেলিত জনপদ। আসলেই অবহেলিত।

এ সময় মন্ত্রী নিজের গ্রামীণ জীবনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘আড়াই মাইল হেঁটে স্কুলে গিয়েছি। গ্রামীণ জীবনের দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনার সঙ্গে বড় হয়েছি। গ্রামীণ আলো-বাতাসে বড় হয়েছি। কাজেই আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে, আমার এ মন্ত্রণালয়ের কাজটা সুচারুভাবে করার কথা চিন্তা করতে পারছি।

‘আমার কর্মজীবন এ মন্ত্রণালয় থেকে শুরু। জাতীয়, বিশেষ করে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে এলজিইডির (লোকাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট) অনন্য ভূমিকা। এই উন্নয়নের মডেল শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা পৃথিবীতেই সমাদৃত। যার কারণে জাতিসংঘ ….ইন্টারন্যাশনাল লেবার অরগানাইজেশন তাদের টেকনিকাল অ্যাডভাইজার করে আমাকে জেনেভায় নিয়ে যায়। যে, আপনার এই মডেল, যেই মডেলে বাংলাদেশে পল্লী উন্নয়ন আপনি করেছেন, তা আফ্রিকায় করেন।

‘তো, আমাদের এই উন্নয়ন মডেল সারা পৃথিবী গ্রহণ করেছে। আমি অত্যন্ত গর্বের সাথে বলছি, বাংলাদেশ সারা পৃথিবীতে রোল মডেল হিসেবে পরিচিত।

‘এখন যা বর্তমান অবস্থা আমাদের, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো গৃহ বিদ্যুতের বাইরে থাকবে না। এবং উনি অলরেডি তার অঙ্গীকার ৮০ ভাগ পূরণ করেছেন। ফরিদপুর সদর থানা, সদর উপজেলা ১০০ভাগ বিদ্যুতায়ন হয়ে গেছে।

অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শুধু ফরিদপুর না, সারা বাংলাদেশেই যেটা ধাবিত হয়েছে, এই এলজিইডি সেটা করেছে। কোনো গ্রাম শহর থেকে ৩০-৪৫ মিনিটের বেশি দূরে না। এটা সত্যি কথা। অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে গ্রাম এবং শহরের যেই মাইগ্রেশন হয়, সেটা এখন নেই বাংলাদেশে। কারণ, যে কোনো লোক গ্রাম থেকে শহরে এসে কাজ শেষ করে সন্ধ্যার মধ্যে বাসায় যেতে পারে।এটা শেখ হাসিনার অবদান। বাংলাদেশ সারা পৃথিবীতে উন্নয়নের রোল মডেল।

‘এ সময় আজকের সংবর্ধনা পাওয়া নিয়ে কথা বলেন মন্ত্রী। বলেন, আরব দেশে গেলে মহাসংবর্ধনা পাই। কিন্তু আজকে নিজের আত্মীয়ের কাছ থেকে যে সংবর্ধনা পেলাম, এটা জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সংবর্ধনা। এ সংবর্ধনা সারাজীবন মনে থাকবে।’

এ সময় নিজের মঞ্চে থাকা নাতিকে উদ্দেশ্ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমার নাতি দাদার সংবর্ধনা দেখল। অমার প্রজন্ম আপনাদের অবদান মনে রাখবে ইনশাল্লাহ। আপনারা যে সংবর্ধনা দিলেন, এর জবাব দেয়ার শক্তি আমার নাই। সামনে ডিসেম্বরে নির্বাচন। যদি নির্বাচিত হই, আবার যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ক্ষমাধিন্য করে আমাকে একটা মন্ত্রণালয় দেন, তাহলে দেখবেন কি রকম উন্নয়ন করি আমি।

‘আমার তো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নাই। আমার বয়স ৭৯ বছর। ৭৯ বছর বয়সের কোনো মানুষের চাওয়ার কিছু আছে? আমার তো এখন দেয়ার সময়। আমার যতটুকু দেয়ার শক্তি আছে, তা আমি প্রথমে বৃহত্তর ফরিদপুরবাসীর জন্য উৎসর্গ করব, তারপর অন্যান্য জেলা।

‘আমাকে দিনাজপুরে এক জায়গায় জিজ্ঞেস করল, আপনি শুধু ফরিদপুর ফরিদপুর করেন, ব্যাপারটা কি? মন্ত্রী বলেন, আমাকে ফরিদপুরবাসী জেতায়। বিশেষ করে কৈজুরী ইউনিয়নে আমাকে ১২ হাজার ভোটে জিতায়। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ২ হাজার ভোট পায়, আমি পাই ১২ হাজার। তখন বললাম, তোমরা কি আমাকে এই ১২ হাজার ভোট দিবা? তখন আর কথা বলে না। বলে তা তো পারব না। তাহলে আমি ফরিদপুর ফরিদপুর করব না কেন ভাই। ফরিদপুরবাসী ভোট দেয় দেখেই আমি তোমাদের সামনে উপস্থিত। তোমরা সংবর্ধনা দিচ্ছ।

‘আজকে এখানে (সংবর্ধনায়) না আসলে আমি বুঝতাম না, ঢাকায় এতো ফরিদপুরের মানুষ বাস করে। আপনারা আমার মতো লোককে সংবর্ধনা দিলেন, আমাকে আসলে আপনারা কিনে ফিললেন ভাই। যারা এই আয়োজন করেছেন, আমার মতো লোককে এতো ব্যাপক হারে সংবর্ধনা দিলেন, এটা কিন্তু একটা বিরল ঘটনা। বিশেষ করে এ কে আজাদের নাম বলতে হয়। আমার ভাই ফরিদপুরের বিশিষ্ট লোক মির নাসির সাহেবকে ধন্যবাদ জানাতে হয়। আমি সকলকে আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাই। আপনজনের এই সংবর্ধনা বিরল ঘটনা।’

সবশেষে মন্ত্রী ফরিদপুরের জন্য দোয়া চেয়ে বলেন, ‘…আর ফরিদপুরের জন্য আপনারা সকলে দোয়া করবেন, যাতে ফরিদপুরকে বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ জেলা করতে পারি।’

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x