আনন্দ–আয়োজনে উচ্ছ্বাসে সারা বেলা

সকালের সূর্য কেবল উঁকি দিয়েছে। উষ্ণ আবহাওয়ায় কেউ এসেছে বাবার হাত ধরে, কেউ এসেছে মা–বাবাকে সঙ্গে নিয়ে। দাদা বা বড় ভাইবোনকে নিয়েও এসেছে অনেকে। সবারই গন্তব্য ছিল হাতকোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ। অন্যান্য দিনের মতো বই খাতা নিয়ে নয়। বরং রঙিন সাজে এসেছিল তারা।

এদিন ঢাকার ধামরাইয়ের গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের হাতকোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছিল বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। শতাধিক শিক্ষার্থী মেতেছিল ক্রীড়া নৈপুণ্য দেখানোর উৎসবে।

সকাল থেকেই শুরু হয় খেলা। প্রথমেই ১০০ মিটার দৌড়। এরপর একে একে রকমারি খেলাধুলায় মেতে ওঠে বিভিন্ন বয়সী শিক্ষার্থীরা। কখনও হাঁসের মতো হাঁটা, কখনও উচ্চ লাফ, কখনও বল নিক্ষেপ। কেউ কেউ যেমন করছে মন খারাপ। আবার বিজয়ীরা হয়েছিল আনন্দে মাতোয়ারা।

আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বালকরা ১২টি ও বালিকারা ১২টি মোট ২৪টি প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এরমধ্যে ছিল, ১০০ মিটার দৌড়, বস্তা বাধা দৌড়, দীর্ঘ লাফ, মোরগ লড়াই, ৮০ মিটার দৌড়, হাঁসের মতো হাঁটা ও ব্যাঙ লাফ। বিজয়ীদের জন্য ছিল নানা পুরস্কার।

প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় হওয়াটা ছিল শুধুই নিয়ম রক্ষা; খেলায় অংশগ্রহণই ছিল মূল। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই প্রতিযোগিতায় কোনো স্থান অর্জন করতে না পারলেও ছিল খুশি। তাদের চোখেমুখে ছিল উচ্ছ্বাসের ঝিলিক।

‘এখানে এসে আমার অনেক ভালো লাগছে…।’ জানতে চাইলে ভাঙা ভাঙা উচ্চারণে এভাবেই নিজের অনুভূতির কথা জানায় প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইসমাইল।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের হাসিরও দেখা মেলে। আয়োজনের সকাল থেকেই রোদের ওম গায়ে লাগিয়ে চলতে থাকে বিভিন্ন খেলা। গৃহিণী মুক্তি আক্তার তার দুই সন্তানকে নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও ছেলেবেলায় এসবে আনন্দ করেছি। এখন বাচ্চারা খেলছে। আমার ছেলে দুটিতে জিতেছে। ওদের এই আনন্দ–উচ্ছ্বাসে থাকতে পেরে অভিভাবক হিসেবে আমিও আনন্দিত।’

হাতকোড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবন্ধ রাখে না। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ রেহানা পারভীন বলেন, ‘একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যত ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রম রাখা যায়, আমরা সব কটিই রাখার ব্যবস্থা করেছি। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পাশাপাশি আমরা অন্য খেলাও পরিচালনা করে থাকি।’

আয়োজনে খুদে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে মাঠে উপস্থিত ছিলেন জীবন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রধান নির্বাহী মাসুদ রানা। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জন্য ক্রীড়া আয়োজনগুলো খুবই কাঙ্ক্ষিত। সবাই এ দিনগুলোর জন্য অপেক্ষা করে। এমন দিনগুলোয় বন্ধুরা মিলে খেলায়–আনন্দে সময় কাটানো উচিত। তাহলেই একজন শিক্ষার্থী সত্যিকারের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে।’

খুদে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিয়ে গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের মোল্লা বলেন, ‘খেলাধুলা একজন শিক্ষার্থীর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে। তাই অভিভাবকদের উচিত খেলাধুলার সুযোগ আছে—এমন প্রতিষ্ঠানেই সন্তানকে পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়া। স্কুলে যত বেশি খেলাধুলার আয়োজন করবে, শিক্ষার্থীদের দক্ষতা তত বেশি বৃদ্ধি পাবে।’

হাতকোড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. জুয়েল হোসেন, সাবেক সভাপতি মো. সহিদ হাসান, সহ-সভাপতি মো. মনোয়ার হোসেন রুবেল, সব শিক্ষক ও স্থানীয় গণ্যমান্যরা এতে উপস্থিত ছিলেন।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x