অবশেষে ১ বছর পর বাংলাদেশেই শায়িত হলেন ইতালির বংশোদ্ভূত ফাদার রিগন

হাজারো ভক্ত-অনুরাগীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ইতালির বংশোদ্ভূত বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিক ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ফাদার ম্যারিনো রিগনকে বাগেরহাটে সমাহিত করা হয়েছে।

ফাদার ম্যারিনো রিগনের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী রোববার বিকেলে মংলা উপজেলার শেলাবুনিয়ার সেন্ট পলস গির্জার পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

মৃত্যুর এক বছর পর সরকারিভাবে রিগনের মরদেহ ইতালি থেকে রোববার ভোরে বাংলাদেশে আনা হয়। সকাল ৯টা ৪৮ মিনিটে তার কফিনবাহী হেলিকপ্টার মংলার শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে অবতরণ করে। পরে রিগনের কফিনটি গ্রহণ করেন খুলনার সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ও বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস।

মংলা উপজেলা পরিষদের মাঠে ফাদার ম্যারিনো রিগনের কফিনে হাজার-হাজার মানুষ শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। দুপুরে রিগনের প্রতিষ্ঠিত সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয় এবং সেন্ট পলস হাসপাতালে কফিন নেয়া হলে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীসহ হাজারো ভক্ত শেষ শ্রদ্ধা জানান। বিকেলে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে সেন্ট পলস গির্জার পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রিগনকে সমাহিত করা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- ইটালির রাষ্ট্রদূত মারিও পালমা, ইটালিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা ইকবাল আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল (বীরপ্রতিক) সাজ্জাত আলী জহির, সচিব নমিতা হালদার, খুলনা সিটির মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব সুডানা ইকরাম চৌধুরী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিফ প্রটোকল অফিসার মোনতাসির, ঢাকার ফার্মগেট চার্চের ফাদার মাই লিলিয়ান, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব জহিরুল ইসলাম, উপসচিব আসাদুল ইসলাম, বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার সুলাইমান হোসেন, বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস ও পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায়সহ কয়েক হাজার ভক্ত-অনুরাগী।

ফাদার ম্যারিনো রিগন ১৯২৫ সালের ৫ জানুয়ারি ইতালির ভিলাভার্লায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৫৩ সালে বাংলাদেশে আসেন। তিনি দীর্ঘদিন মংলার হলদিবুনিয়া গ্রামে বসবাস করেন। ফাদার রিগন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও চিকিৎসা দেয়ার মাধ্যমে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ২০০৯ সালে রিগনকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করে বাংলাদেশ সরকার।

ফাদার রিগন মংলায় থাকা অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চলাচলের শক্তি হারিয়ে ফেললে ২০১৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ভাই-বোন এসে তাকে ইতালিতে নিয়ে যান।

ফাদার রিগন মংলায় থাকা অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চলাচলের শক্তি হারিয়ে ফেললে ২০১৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ভাই-বোন এসে তাকে ইতালিতে নিয়ে যান।

ইতালিতে মৃত্যু হলে তার মরদেহ বাগেরহাটের মংলার সেন্ট পলস গির্জার পাশে সমাহিত করতে হবে এই শর্তে তিনি স্বজনদের সঙ্গে ইতালি যেতে রাজি হন। গত বছরের ২০ অক্টোবর ইতালির ভিচেঞ্চায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বাংলাদেশের বন্ধু ফাদার রিগন।

দীর্ঘসময় বাগেরহাটের মংলায় অবস্থানকালে জেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয়সহ ১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সেন্ট পলস হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন সেন্ট পলস সেলাই কেন্দ্র। যেখান থেকে নারীদের হাতে সেলাই করা নকশি কাঁথা এখন বিদেশে রফতানি করা হয়।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments